বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ:
আজ ১৯ জুন সকালে ময়মনসিংহে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বি.টি.এ) ময়মনসিংহ জেলা শাখা মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বি.টি.এ) ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি মো. চাঁন মিয়া। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল হক। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলেন, “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হলে শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার মেরুদন্ড; সমাজ ও সভ্যতার বিবেক এবং জাতি গঠনের স্থপতি।” অথচ সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী একই কারিকুলামের অধীনে একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে। সহকারি প্রধান শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষকের স্কেল একই রয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকার জন্য। ফলে অনেক শিক্ষক/ কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তাছাড়া কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে যা অমানবিক। তারা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সরকারের নিকট আমাদের দাবিনামা পেশ করে আসছি এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিকি অনশন, অবস্থান ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালনসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে গত ৮ মার্চ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যৃমে “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ” এর ন্যায়সঙ্গত দাবিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছি এবং ২০ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ থেকে আসন্ন বাজেটে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের ঘোষণাসহ পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার জন্য আহব্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা এখনও জাতীয়করণের ঘোষণা পাইনি। তারা তাদের লিখিত বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র অনুমোদিত ৩১৪৬টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক সনদের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ থাকলেও ২০২২- ২০২৩ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে ছিল ১১.৯২ শতাংশ অথবা জিডিপি’র ১.৮৩ শতাংশ। অথচ ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে বরাদ্দ কমিয়ে জাতীয় বাজেটের ১১.৫৭ শতাংশ অথবা জিডিপি’র ১.৭৬ শতাংশ করা হয়েছে। তাই ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ জাতি আজ চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, রাস্তাঘাট তৈরি, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণসহ বিভিন্ন সেক্টরে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়ন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তারা দুঃখ প্রকাশ করে তারা বলেন, তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্মার্ট জাতি গঠনে স্মার্ট শিক্ষক দরকার। তাই সম্মেলনে স্মার্ট শিক্ষক ও দক্ষ মানবসম্পদ পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের জোর দাবি জানান। তারা জানান, আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাননীয় সংসদ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় এবং লিফলেট বিতরণ করা হবে। এতদসত্বেও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে জাতীয় বাজেট পাসের পূর্বেই মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট ঘোষনা না দিলে আগামী ১১ জুলাই থেকে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শামছুন্নাহার বেগম, সহসভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটি, মো. এনামুল হক সরকার, সভাপতি গৌরিপুর উপজেলা শাখা, মো. আতাউর রহমান আলআমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সদর উপজেলা শাখা, মো. শরাফ উদ্দীন, সভাপতি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখা, এ কে এম সাইফুল ইসলাম কাজল, সভাপতি ফুলবাড়ীয়া উপজেলা শাখা, মো. এরশাদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা শাখা প্রমুখ।